৫০ বছর পর আজও প্রাসঙ্গিক - ভোরের সময় অনলাইন ৫০ বছর পর আজও প্রাসঙ্গিক

বেকিং নিউজ

[getTicker results="10" label="random" type="ticker"]

Header Adds


৫০ বছর পর আজও প্রাসঙ্গিক

পাবলো পিকাসো (২৫ অক্টোবর ১৮৮১—৮ এপ্রিল ১৯৭৩)ছবি: সংগৃহীত


পাবলো পিকাসো। তাঁর নাম শুনলেই সবার শুরুতে আমরা মনে করতে পারি ‘গোয়ের্নিকা’র কথা। যুদ্ধের শিকার অসহায় মানুষের করুণ কান্না, হাহাকার ও আর্তি, সর্বোপরি যুদ্ধের বীভৎসতা একসঙ্গে ধারণ করেছে পিকাসোর এই ম্যুরাল।


কারও কাছে কমিউনিস্ট, আবার কারও কাছে বুর্জোয়াদের পোষ্য আখ্যা পাওয়া পিকাসো ছিলেন আসলে ধোঁয়াশায় ভরা এক চরিত্র। নিজের আঁকা ছবির মতোই বহু-ব্যাখ্যেয় রহস্যে জড়িয়ে থেকেছেন সব সময়। ফলে নিজের জীবদ্দশায়ও তিনি হয়ে উঠেছিলেন একরকম মিথ। এই মিথের বাইরে তাঁকে দেখা দুঃসাধ্য যদিও, তবে শিল্পপ্রিয় মানুষের কাছে প্রিয় শিল্পীর মিথ ও বাস্তবতা—দুই-ই আনন্দময়।


১৯৭৩ সালের ৮ এপ্রিল মারা যান কিংবদন্তি চিত্রকর পাবলো পিকাসো। তার আগের বছরই, অর্থাৎ ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির উদ্যোগে গণসাহিত্য নামের একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকার প্রকাশ শুরু হয়েছে—সম্পাদক আবুল হাসনাত।

উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন শামসুর রাহমান, আনিসুজ্জামান, কাইয়ুম চৌধুরী, মফিদুল হক, মতিউর রহমান প্রমুখ। সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতিবিষয়ক এ পত্রিকার প্রকাশ ছিল বাংলাদেশের সাহিত্যের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। পত্রিকাটি ঘিরে জড়ো হয়েছিলেন একদল তরুণ কবি-লেখক-শিল্পী।

ষাটের দশকের শুরু থেকেই রাজনীতির পাশাপাশি তাঁরা মেতে ছিলেন গান, সাহিত্য ও শিল্পকলা নিয়ে। দুই বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে সারা বিশ্বের প্রগতিশীল কবি–লেখক-শিল্পীদের প্রতি তাঁদের তখন ব্যাপক আগ্রহ। বিশ্বের সেরা সব কবিতা তাঁদের ভাবায়, গান দেয় মগ্নতা, অভিনয় মুগ্ধ করে আর বিভিন্ন শিল্পীর আঁকা ছবি আপ্লুত করে তাঁদের।

কোথাও ছবি প্রদর্শনীর কথা শুনলেই দল বেঁধে দেখতে চলে যান। সাধ্যমতো পছন্দের ছবির প্রতিলিপি সংগ্রহও করেন কেউ কেউ। ফলে পৃথিবীখ্যাত স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর পাবলো পিকাসো তাঁদের পছন্দের তালিকায় থাকবেন, সেটিই স্বাভাবিক। আসলে সামরিক শাসনবিরোধী প্রবল ছাত্র আন্দোলনের সময় বা স্বাধীনতার পরপরও ওই তরুণ প্রজন্মের কাছে গভীরতর আবেগের অংশ হয়ে উঠেছিলেন স্পেনের এই চিত্রশিল্পী।

ফলে তাঁর মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পরপরই মর্মাহত তরুণেরা সিদ্ধান্ত নিলেন, পিকাসোর স্মরণে গণসাহিত্য-এর একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবেন। সেটি তাঁরা করেছিলেন। পরম যত্নেই করেছিলেন।


গণসাহিত্য-এর বিশেষ সেই সংখ্যায় পাবলো পিকাসোকে নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছিলেন রণেশ দাশগুপ্ত, ইলিয়া এরেনবুর্গ, বিষ্ণু দে, রশিদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম, সন্তোষ গুপ্ত, শামসুর রাহমান, রফিকুন নবী, মতিউর রহমান, আবদুর রাজ্জাক, মুনতাসীর মামুন ও আখতার হুসেন। হ্রস্ব-দীর্ঘ-নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধগুলোর কোনোটিতে পিকাসোর জীবনী নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, কোথাও জীবনের বিশেষ কোনো দিকে আলো ফেলা হয়েছে। কোনোটিতে তাঁর শিল্পের বর্ণনা আর কোনোটিতে আছে বিশ্লেষণ।


প্যারিসে থাকাকালে পিকাসোর ছবিতে তখনকার কবি–বন্ধুদের কবিতার কেমন প্রভাব পড়েছিল অথবা সেই কবিদের কবিতা ও অন্যান্য লেখালেখিতে পিকাসোর চিত্রকলার কেমন উপস্থিতি ছিল, এমন সব বিষয় নিয়ে রয়েছে বিশদ আলোচনা। ‘গোয়ের্নিকা’ আঁকা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বিশ্বশান্তি আন্দোলনের সঙ্গে পিকাসোর সম্পৃক্ততা অথবা ফরাসি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হয়ে সারা বিশ্বে তুমুল হইচই ফেলে দেওয়া, তাঁর আঁকা ‘শান্তির কপোত’ শান্তি আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হওয়ার ঘটনাসহ সেই ৪০–৫০ দশকজুড়ে তাঁর বহুমুখী কর্মকাণ্ড আমাদের গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করবে।


সংখ্যাটিতে পিকাসোকে নিয়ে লেখা কবি পল এলুয়ার ও রাফায়েল আলবের্তির দুটি কবিতা অনুবাদ করে ছাপা হয়েছে। এর বাইরে বিশেষ আকর্ষণ হলো ‘জেনারেল ফ্রাঙ্কোর দুঃস্বপ্ন’ শিরোনামে পিকাসোর নিজের লেখা কবিতা।

১৯৩৭ সালে স্পেনের গৃহযুদ্ধে জেনারেল ফ্রাঙ্কো ও তাঁর ফ্যাসিস্ট বাহিনীর বিরুদ্ধে গণপ্রজাতন্ত্রী স্পেন সরকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন পিকাসো। গণহত্যাকারী জেনারেল ফ্রাঙ্কোর বর্বর নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিশ্বজনমতকে জাগানোর জন্য তিনি ‘ফ্রাঙ্কোর স্বপ্ন আর মিথ্যা’ নাম দিয়ে একটি প্লেটে কয়েকটি এচিং করেছিলেন। ছবিগুলোর ভূমিকা হিসেবে কবিতাটি লিখেছিলেন পিকাসো।


ফ্যাসিস্ট ও খুনি সরকারের বিরুদ্ধে পিকাসো ছিলেন রাখঢাকহীন ও সদা সক্রিয়। ফলে ১৯৭৩ সালের মে–জুন মাসে প্রকাশিত গণসাহিত্য–এর পিকাসো সংখ্যাটির সমসাময়িক মূল্য বা গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা—কোনোটিই কম নয়। 

৫০ বছর পর এই সংখ্যাটি আবার প্রকাশিত হলো প্রথমা প্রকাশন থেকে। পিকাসোকে অনুভব করার জন্য সংখ্যাটি গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ। কেননা পিকাসোপ্রেমীদের আলোকিত ও আলোড়িত করার অঢেল মসলা রয়েছে এখানে।



এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ