ঈদ উপলক্ষে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন ঘরমুখো মানুষ। স্বপ্ন বাড়ি ফেরার এ যাত্রায় কেউ রেল, কেউ নৌ পথ কেউ বা বেছে নিচ্ছেন সড়ক পথ। যাত্রা পথের স্বস্তি আদৌ কি ভোগ করছেন ঘরমুখো মানুষ— সেই প্রশ্নের উদয় হয় যখন দেখা যায় রেলের সিডিউলগুলোর বিপর্যয় ঘটছে। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে ঈদযাত্রায় প্রথমদিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও বেশ কয়েকটি ট্রেন দেরিতে ছাড়ছে দেখা গেছে। ছবি: সময় সংবাদ কিছুটা স্বস্তির খোঁজেই যেন রেলযাত্রা ঈদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি যাত্রা। বাড়ি যাওয়ার লক্ষ্যে ট্রেনকে যারা বেছে নিয়েছেন স্বস্তির যাত্রা হিসেবে তারাও যেন ভুগেছেন অস্বস্তিতে। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদযাত্রায় প্রথমদিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও বেশ কিছু ট্রেন দেরিতে ছাড়ছে। রাজশাহী নিজ বাড়িতে গিয়ে ঈদ করবে বলে বলে ৮ বছরের মিহি তার মা-বাবার সঙ্গে রেল স্টেশনে এসেছে দুপুর দেড়টার দিকে। কেননা রাজশাহীগামী সিল্ক সিটির ২টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন ঘড়ির কাঁটায় বাজে ৪টা ৪০ মিনিট। এখনও সেই রেলের প্ল্যাটফর্মে আসার খবরই নেই। ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ছোট্ট মিহি ক্লান্ত হয়ে ঘুমিড়ে পড়েছে। ঈদ উপলক্ষে কমলাপুর রেলস্টেশনে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড়। ছবি: সময় সংবাদ দেওয়ানগঞ্জগামী জামালপুর কম্পিউটার৩টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও ঘড়ির কাঁটায় ৪টা ৪০ বাজে। এখনও সেই ট্রেন ছাড়ার কোনো খবর নেই।
যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল থেকে আসা রিয়াদ হোসাইন। তিনিও প্ল্যাটফর্মে এসে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। শুধুই কি এই দুটি ট্রেনের বিপর্যয় ঘটেছে! সকাল থেকে এমন অসংখ্য ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। যদিও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দাবি, দুই-একটি ট্রেন দেরিতে ছাড়লেও সব ট্রেন সময়মতো ছেড়েছে। সব মিলিয়ে ৬৯টা ট্রেন আজ ছাড়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ছেড়েছে সব মিলিয়ে ৩৬টি। যেখানে বহু ট্রেনের ঘটেছে সিডিউল বিপর্যয়ের মতো ঘটনা। স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, দিনের প্রথম ট্রেন রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ভোর ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশন ত্যাগ করেছে আধা ঘণ্টা পরে। এদিকে দিনের দ্বিতীয় ট্রেন পর্যটক এক্সপ্রেস ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে স্টেশন ত্যাগ করার কথা থাকলেও সেটি সাড়ে ছয়টার দিকে স্টেশন ত্যাগ করে। তৃতীয় ট্রেন সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৬টায় ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ঢাকা স্টেশন ছেড়েছে সকাল সাড়ে ৭টায়। কিশোরগঞ্জের এগারোসিন্ধুর প্রভাতী ছাড়ার সময় ৭টা ১৫ মিনিট হলেও সেটি ৯টার পর স্টেশন ত্যাগ করে। চট্টগ্রাম রুটের মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস ৭টা ৪৫ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলে ৮টায় ছেড়ে যায়। যদিও মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস (১টা ১৫) ও বনলতা এক্সপ্রেস (১টা ৩০) সময়মতো প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়। অগ্নিবীনা এক্সপ্রেস ১৫ মিনিট দেরিতে ১১টা ৪৫ মিনিটে রওনা হয়। অন্যদিকে নকশীকাঁথা এক্সপ্রেস ৪৫ মিনিট বিলম্বে ১২টা ২৫ মিনিটে ছেড়ে যায়। রাজশাহী কমিউটারের ট্রেনটির ছাড়ার সময় ১২টা ২০ মিনিট হলেও ১২টা ৪০ পর্যন্ত তা প্ল্যাটফর্মে আসেনি। অবশেষে আড়াইটা নাগাদ তা প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যায়। অন্যদিকে চট্টগ্রামগামী চট্টলা এক্সপ্রেসের ছাড়ার সময় ১টা ৪৫ মিনিটে। কিন্তু ৩টা ১৫ মিনিটে ট্রেনটি প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যায়। তবে ঢাকা স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে রেলে সিডিউল বিপর্যয় নেই।
নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন রেল যাত্রায় যাত্রীদের সেবায় বাংলাদেশ রেল নিরলসভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন, রেলের ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে সকাল ১০টা ৩০ পর্যন্ত কোনো সিডিউল বিপর্যয় ছাড়াই লোকাল মেইল, কমিউটার এবং আন্তঃনগর মিলিয়ে ১৬টি ট্রেন ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। সারাদিনে সর্বমোট ৬৯ জোড়া ট্রেন যাতায়াত করবে। নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষের মধ্যে অনেক নারী, শিশু ও বৃদ্ধ থাকেন। তাদের চলাচল, সময়মতো স্টেশনে পৌঁছানোসহ নিরাপত্তার জন্যও অনেক সময় ট্রেন ছাড়তে কিছুটা বিলম্ব হয়। তবে ঈদুল আজহার যাত্রায় এখন পর্যন্ত কোনো সিডিউল বিপর্যয় বা বিলম্ব হয়নি। আশা করছি হবেও না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের এক কর্মকর্তা সময় সংবাদকে বলেন, সকালে কয়েকটি ট্রেন সময়মতো ছাড়লেও ১২টার পর থেকে মূলত সিডিউল বিপর্যয় শুরু হয়। রেলের সিডিউল মেনে চলাটা অনেকটাই অসম্ভব ঈদের সময়। সিডিউল বিপর্যয় হবেই। গতকালও হয়েছে। আজও হয়েছে, হচ্ছে। কালও হবে। ট্রেনের জন্য কমলাপুর রেলস্টেশনে বাড়ি ফেরা মানুষের অপেক্ষা । ছবি: সময় সংবাদ তবে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম দাবি করছেন, গত ঈদুল ফিতরে তিনি রেলযাত্রার জন্য গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছেন। এবারও তিনি গোল্ডেন পাবেন। বৃহস্পতিবার কমলাপুর রেল স্টেশনে ট্রেনের পদযাত্রার পরিস্থিতি তদারকি করতে এসে এ কথা বলেন তিনি। রেলমন্ত্রী আরও বলেন, গত ঈদুল ফিতরের সময়ও সফলতার সঙ্গে যাত্রীদের গন্তব্যে আমরা পৌঁছাতে পেরেছি। তাদের ফেরত আসার ব্যবস্থাও আমরা করেছি। বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা এবং রেলের সংশ্লিষ্ট সবার সহায়তায় আমরা সফল হয়েছি। গতবার আমাকে অনেকে ফোন করে বলেছে, আমি গোল্ডেন প্লাস পেয়েছি। ,
ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ে বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আজকে সকাল থেকে প্রায় ৩০টা ট্রেন সময়মতো ছেড়েছে। দুই একটি সিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। তবে এবারের যাত্রা যেন গতবারের চেয়ে ভালো হয় এটাই প্রত্যাশা। ট্রেন অনেক লম্বা দূরত্ব পাড়ি দিয়ে আসে এবং রেল ক্রসিংয়ের কারণে অনেক সময় দেরি হয়। এটা আমরা চেষ্টা করছি যেন সবগুলো ট্রেন সময়মতো স্টেশন ছাড়তে পারে। দুই একটাতে মিসগেলে গোল্ডেন মিস যাবে না। এবারো আমি গোল্ডেন পাব।,
0 মন্তব্যসমূহ