পূর্বধলা সরকারি কলেজের ফলাফল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় - ভোরের সময় অনলাইন পূর্বধলা সরকারি কলেজের ফলাফল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড়

বেকিং নিউজ

[getTicker results="10" label="random" type="ticker"]

Header Adds


পূর্বধলা সরকারি কলেজের ফলাফল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড়



পূর্বধলা ( নেত্রকোনা) প্রতিনিধিঃ এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। এবার এইচএসসিতে সারা দেশে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ থাকলে নেত্রকোনার পূর্বধলা সরকারি কলেজের ফলাফলে ঘটেছে বিপর্যয়। এতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে উঠেছে সমালোচনার ঝড়।


পূর্বধলা সরকারি কলেজের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত বছর কলেজে এইচএসসিতে পাশের হার ছিল ৬০.৭১ ভাগ। এ বছর পাশের হার কমে গিয়ে তা দাঁড়িয়েছে ৫০.৪৩ ভাগে। একই উপজেলায় অবস্থিত হাফেজ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজের পাশের হার ৮৪%, রাবেয়া আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজের পাশের হার ৬৯%, জটিয়াবর মহাবিদ্যালয়ের পাশের হার ৭৫% ও খলিশাপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশের হার ২৫%।


পূর্বধলা সরকারি কলেজ সূত্রে জানাযায়, এবছর মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৯৪১ জন এর মধ্যে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাশ করেছে ৩২ জন, মানবিকে ৪২২ জন ও বিজ্ঞান বিভাগে ১৫ জন। মোট পাশ করেছে ৪৬৯ জন। জিপিএ পেয়েছে ১১জন এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ৪জন ও মানবিকে ৭জন ।


তুলনামূলকভাবে মানবিক বিভাগ থেকে ৫০% ছাত্র-ছাত্রী কৃতকার্য হলেও শোচনীয় ফলাফল ছিল বিজ্ঞান বিভাগের।

বিজ্ঞান বিভাগে মোট পরিক্ষার্থী ছিল ৪৩জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ১৫জন। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে পূর্বধলা সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে একটি আধুনিক বিজ্ঞানাগার ও পর্যাপ্ত মেধাবী শিক্ষকসহ সমস্ত সুযোগ সুবিধা থাকার পরও কেন ফল বিপর্যয়।


এইসব কারণে কাংখিত ফলাফল অর্জিত না হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠে। জনৈক ইকবাল কবির পিয়াস, আল আমিন শেখ, তাইজুল ইসলাম, ফিরোজ সাঁই, বেলায়েত হোসাইনসহ অনেকেই তাদের ফেইসবুকের টাইমলাইনে লিখেছেন: কলেজ সরকারি করার পর থেকেই রেজাল্ট গোল্লায়। বেতনের স্কেল বাড়লো শিক্ষার মান কমলো। রেজাল্টের বেহাল দশার দায় এড়াতে পারবে না কোন শিক্ষক।

বলাকা ট্রেনের পক্ষ থেকে শুভ কামনা রইল। পূর্বধলা কলেজের রেজাল্ট খাইয়া দিছে রাজধলা বিলে, রতন স্যারের ২০২৪ এর অবদান খাইয়া দিলো ছাত্র/ছাত্রীদের সুন্দর জীবনটাকে।


স্থানীয় অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রেজাল্ট বিপর্যের অন্যতম কারণ শিক্ষকদের ক্লাস ফাঁকি দেওয়া ও খেয়াল খুশী মতো প্রতিষ্ঠানে আসাযাওয়া।

অনেক শিক্ষক বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহে থাকেন। বলাকা কমিউটার ট্রেন ও লোকাল ট্রেনই হলো তাদের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। ট্রেনের সাথে তাল মিলিয়েই তারা কলেজে আসা যাওয়া করেন।

কিন্তু গণকর্মচারী শৃঙ্খলা (নিয়মিত উপস্থিতি) অধ্যাদেশ ১৯৮২ এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫ এবং সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ ১৯৭৯ অনুযায়ি দেশের সব সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীর মত সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রতিদিন কর্মস্থলে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক।


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় প্রতিনিধি হুমায়ুন তাজওয়ার পল্লব জানান, পূর্বধলা ডিগ্রি কলেজ সরকারি হওয়ার পরেও আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রতিবারই খারাপ রেজাল্ট। এ দায় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এড়াতে পারেন না।

এলাকাবাসী এবং অবিভাবকবৃন্দ এটা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তা প্রকাশ করছে। সমস্যার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায় শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের প্রতি অবহেলা, নিয়মিত ক্লাসের অভাব এবং শিক্ষকদের কলেজে অনুপস্থিতি ।

ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত ৬ দফা দাবি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মেনে নেয়ার পরেও সেগুলোর বাস্তবায়নে অবহেলার ফলাফল স্বরুপ আবারও এই খারাপ রেজাল্ট। পূর্বধলাবাসী এবং "বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন,পূর্বধলার সকলের দাবী এই ৬ দফা বাস্তবায়ন করে কলেজের সুশৃঙ্খল পরিবেশ এবং ভালো ফলাফলের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা হোক।


পূর্বধলা উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মো. সাজু আহমেদ জানান, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অযোগ্যতার কারণেই ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে। কেননা সরকারি কলেজের একজন অধ্যক্ষ থাকবে বিসিএস ক্যাডার। তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন যাবত এ পদে আছেন।

তাছাড়া প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত পাঠদানও হয় না। আশা করি সরকার এ প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ নিয়োগ করলে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসবে।

পূর্বধলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও পূর্বধলা উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি মো. সাইদুর রহমান তালুকদার জানান, আমরা আর ফলাফল বিপর্যয় দেখতে চাইনা। অতি শীগ্রই এ সমস্যার সমাধান চাই। আমরা আর সমালোচনার পাত্র হতে চাইনা।

কলেজ কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে নতুন করে চিন্তা করতে হবে। শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের একসাথে এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষকরা যদি নিজেরাই লজ্জিত না হয় তাহলে আমরাই কেন লজ্জিত হবো?

পূর্বধলা সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আনোয়ারোল হক রতন বলেন, এ বছর শুধু আমাদের প্রতিষ্ঠানেই রেজাল্ট খারাপ হয়নি। সারা ময়মনসিংহ বিভাগেই এ অবস্থা। তা ছাড়া এবছর ফল বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা কর্মীদের সুপারিশে ঢালাওভাবে ফেল করা শিক্ষার্থীকে পরিক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়ায় ।

আগামী থেকে তা আর হতে দেব না। ফলাফল বিপর্যের আরেকটি কারণ হলো, পরিক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র পরিবর্তন। যেমন রাবেয়া আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী পরিক্ষা দেয় আমাদের কলেজে। আর আমাদের শিক্ষার্থী তাদের কলেজে।

রাবেয়া আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজে শিক্ষক স্বল্পতার কারণে আমাদের পরিক্ষার্থীদের পরিক্ষা নেয় উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এতে আমাদের পরিক্ষার্থীদের অনেক অসুবিধার সন্মর্খীন হতে হয়।


অপর দিকে কলেজে শিক্ষকরা খেয়াল খুশী মতো প্রতিষ্ঠানে আসার ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, একজন শিক্ষকের ক্লাসের রুটিন হলো বেলা ২টায়।

সে দুইটায়ই আসবে। তাকে সকাল ৯টা থেকে কলেজে বসিয়ে রাখলে ছাত্রদের লাভ কি ?
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক জানান, সরকারি কলেজ আমাদের নিয়ন্ত্রণে না।

এটি পরিচালনা করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক। এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক প্রফেসার আজহারুল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্ঠা করে তাকে পাওয়া যায়নি।



তথ্যসূত্রঃ ইত্তেফাক, পূর্বক
এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ