মিজানুর রহমান, কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ কক্সবাজারের টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়ার পাহাড়ের চূড়ায় অভিযান পরিচালনা করে মানব পাচারকারীদের গোপন আস্তানা হতে ৫ বাংলাদেশী ও ২৬ রোহিঙ্গা ভিকটিম উদ্ধার ; মানব পাচারকারী চক্রের ২ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
সোমবার (১৮ নভেম্বর ) মধ্যরাতে তাদের ৩১ জনকে উদ্ধার ও মানব পাচারকারী চক্রের ২ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারে দায়িত্বরত র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারি পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া) দেবজিত পাল।
তিনি বলেন,অদ্য সোমবার মধ্যরাতে র্যাব-১৫ এর সিপিসি-২, হোয়াইক্যং ক্যাম্পের আভিযানিক দল কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানাধীন বাহারছড়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের কচ্ছপিয়া এলাকাস্থ জনৈক নুর হোসেনের বাড়ীর পিছনে পাহাড়ের চূড়ায় একটি গোপন আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় মানব পাচারকারীদের হেফাজত হতে ৫ বাংলাদেশী (পুরুষ-০৩, নারী-০১, শিশু-০১) ও ২৬ রোহিঙ্গা নাগরিক (পুরুষ-০২, নারী-০২ ও শিশু-২২) সহ সর্বমোট ৩১ জন ভিকটিমকে উদ্ধার এবং পাচার চক্রের ২ সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
তিনি আরও বলেন, উদ্ধারকৃত ভিকটিমদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভিকটিমদের মালয়েশিয়ায় নেয়ার কথা বলে কচ্ছপিয়ার পাহাড়ের চূড়ায় আস্তানায় আটকে রাখে মানব পাচারকারীরা। সেখানে থাকা অবস্থায় বার্মায় আছে বলে ভিকটিমদের পরিবারের নিকট ফোন করে টাকা দাবী করা হতো। এভাবে করে অনেকের নিকট হতে জনপ্রতি এক লক্ষ করে টাকা আদায় করে পাচারকারীরা। উদ্ধারকৃত এক ভিকটিমের ভাষ্যমতে তাকে আট দিন ধরে পাহাড়ী ঐ আস্তানায় আটকে রাখা হয়। অপর এক ভিকটিমকে আটকে রাখা হয় তের দিনের অধিক সময়। উদ্ধারকৃত এ সকল ভিকটিমদের ঠিকমত দেয়া হতো না খাবার। করা হতো বিভিন্নভাবে নিযার্তন।
গ্রেফতারকৃত মানব পাচারকারীরা হলেন, হ্নীলা ইউনিয়নের পানখালী ৪নং ওয়ার্ডের
অছিউর রহমানের ছেলে মোঃ আনোয়ার (৪৪) এবং টেকনাফের সদরের ২নং ওয়ার্ডের উত্তর লম্বরী এলাকার মৃত মোঃ রফিকের ছেলে মোহাম্মদ আইয়ুব (৩৬)।
উদ্ধারকৃত ভিকটিমরা হলেন,চকরিয়ার দোলহাজারা ইউনিয়নের আবুল কালামের ছেলে আতিকুর রহমান (৩২), মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়নের আব্দুল কাদের ছেলে মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম (২৭), ফরিদের ছেলে মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন (২২), নজির আহমেদ এর ছেলে মোহাম্মদ শহিদ (১৭), টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়নের শাপলাপুর এলাকার সাব্বিরের মেয়ে হাসনা বেগম (১৮), ও রোহিঙ্গারা হলেন, ক্যাম্প-১২, ব্লক-জি-১৭ এর মনজুর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ নূর (১২), ক্যাম্প-০৩, ব্লক-এইচ-৩৬ এর নূর মোহাম্মদের ছেলে নূর কামাল (৩৫), ক্যাম্প-১৭, ব্লক-এইচ-১০০ এর আজিমুল্লাহ এর ছেলে শরীয়ত উল্লাহ (১৭), ক্যাম্প-০৫, ব্লক-ই-১ এর সৈয়দ নুরের ছেলে মোহাম্মদ আরাফাত (১৪), ক্যাম্প-১৯, ব্লক-ডি-১২ এর হাফেজ আহমেদের ছেলে নাইমুল হাসান (২০), ক্যাম্প-০৩, ব্লক-ই-৫৪ এর জালাল আহমেদ এর ছেলে আয়াতুল্লাহ (১২), ক্যাম্প-১৩, ব্লক-জি-০৩ এর অলি আহমদের ছেলে সালমান (১৭),ক্যাম্প-১৩, ব্লক-এফ-১ এর কোভির আহমেদের ছেলে মোহাম্মদ নূর (১৭), ক্যাম্প-০৩, ব্লক-ডি-৪০ এর আব্দুল মোতালেব মেয়ে ও মহিবুল্লাহর স্ত্রী সেনোয়ারা (২৫), ক্যাম্প-১৭, ব্লক-এ-১০০ এর অলি আহমদের মেয়ে খুইললে বানু (১৮), ক্যাম্প-১৩, ব্লক-জি-৩ এর অলি আহমদের মেয়ে সুফাইরা (১৭), ক্যাম্প-০৩, ব্লক-সি-৪১ এর আলী জোহার এর মেয়ে তশমিনা আরা (১৭), ক্যাম্প-০৩, ব্লক-সি-৩৯ এর সৈয়দ সালামের মেয়ে জোহরা আক্তার (১৭), ক্যাম্প-০৪, ব্লক-ডি-০৪ এর দিল মোহাম্মদ এর মেয়ে হামিদা (১৭), ক্যাম্প-১২, ব্লক-এইচ-১৩ এর শামসুল হক এর মেয়ে বিবি আছিয়া (২৪), ক্যাম্প-০৩, ব্লক-বি-৪০ এর মুসা আলির মেয়ে চকুতারা (১৮), ক্যাম্প-০৩, ব্লক-ডি-৪০ এর নূর হোসেন এর মেয়ে তসলিমা (১৮), ক্যাম্প-১০, ব্লক-এ-৩৬ এর কাশেমের মেয়ে জান্নাত আর (১৫) ও দিল কায়াস (১৬), ক্যাম্প-০৩, ব্লক-ই-০৬ এর নুর আলমের মেয়ে আরজিনা (১৮), ক্যাম্প-১৭, ব্লক-এ-১০০ এর নুর আলমের মেয়ে রুমিয়াছ (০৭), ক্যাম্প-১৫, ব্লক-বি-০৩ এর নূর মোহাম্মদের মেয়ে দিলারা (১৪), ক্যাম্প-১১, ব্লক-ডি-০৫ এর শামসুল আলমের মেয়ে হামিদা (১৫), ক্যাম্প-১০, ব্লক-এইচ-৩৬ এর মহিবুল্লাহ এর ছেলে নুরুল আমিন (০৮), ক্যাম্প-১০, ব্লক-এইচ-৩৬ এর মহিবুল্লাহ এর ছেলে নুর হাফেজ (০৬), ক্যাম্প-১০, ব্লক-এইচ-৩৬ এর মহিবুল্লাহ এর মেয়ে নুর সাহারা (০৩)।
সিনিয়র সহকারি পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া) দেবজিত পাল আরও জানান, গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ এবং তাদের চক্রের মূলহোতাসহ আরো ৫-৭ জন কৌশলে পাহাড়ের অপর পাশ দিয়ে পালিয়ে যায় মর্মে জানায়। জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, ভিকটিমদের আর্থ-সামাজিক অনগ্রসরতা ও পরিবেশগত অসহায়ত্বকে পুঁজি করে মানব পাচারকারী চক্র উন্নত জীবন-যাপন, অধিক বেতনে চাকুরী ও অবিবাহিত নারীদেরকে বিবাহের মিথ্যা প্রলোভনের মাধ্যমে ছল-চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে যৌন নিপীড়ন, প্রতারণামূলক বিবাহ ও জবর-দস্তিমূলক শ্রম সেবা আদায় এর অভিপ্রায়ে পাহাড়ী আস্তানায় একত্রিত করে মালয়েশিয়া পাচারের জন্য জোরপূর্বক আটক রাখা হয়। মূলহোতাসহ সংঘবদ্ধ মানব পাচার চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের র্যাবের অভিযান চলমান রয়েছে।
উদ্ধারকৃত ৫ বাংলাদেশী ও ২৬ রোহিঙ্গাসহ সর্বমোট ৩১ জন ভিকটিম এবং গ্রেফতারকৃত মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণার্থে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

0 মন্তব্যসমূহ