মিজানুর রহমান, কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ লাখো পর্যটকে মুখরিত থাকে সমুদ্র নগরী কক্সবাজার। আর তাদের শহর কেন্দ্রীক পরিবহণের জন্য বাহন ইজিবাইক (টমটম)। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত ইজিবাইক বা তার চালকদের কাছে প্রতিনিয়ত হয়রানি হচ্ছে আগত পর্যটক ও স্থানীয়রা ।
অভিযোগ আছে, ৫ হাজারের বেশি ইজিবাইক ( টমটম) চালকের মধ্যে বেশিরভাগই দক্ষ নয় বা ছিনতাইসহ নানা অপরাধে সাথে জড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পর্যটকদের টার্গেট করে ছিনতাই, আচরণগতভাবে হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ নানা অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া অতিরিক্ত ইজিবাইক ও তার দক্ষ চালক না থাকায় তীব্র যানজট লেগেই আছে পর্যটন নগরীতে। এতে পর্যটক ছাড়াও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় স্থানীয়দের। এমন পরিস্থিতিতে ইজিবাইক চালকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, একটি সুশৃঙ্খল পর্যটন নগরী গড়ে তুলতে হলে অবশ্যই অনিয়ন্ত্রিত ইজিবাইক চালকদের লাগাম টানতে হবে। যেকোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ অন্তত চার হাজার চালককে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে চাই। যার জন্য প্রাথমিকভাবে ৪ শতাধিক চালককে ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তাদের পরিচয় ও এলাকায় যাচাই-বাচাইয়ো করা হচ্ছে। সেই সাথে যারা কোন অপরাধ বা অনিয়মের সাথে জড়িত নয় তাদেরকে একটি পরিচয় পত্রও দেয়া হচ্ছে।
ইজিবাইক চালকদের প্রতি পুলিশ যে বার্তা দিয়েছে, যেসব চালক প্রশিক্ষণের আওতাভুক্ত হবে না তাদের ইজিবাইক চালাতে পারবেন না। আর যাদের ব্যাপারে যাচাই-বাচাইয়ের সময় মামলা বা অপরাধের তথ্য আসবে তারাও ইজিবাইক চালক হিসেবে গণ্য হবেন না। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে পুলিশের ডাটাবেজে অংশ নেয়ার আহবান জানিয়েছেন।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, একটি সুশৃঙ্খল, নিরাপদ ও যানজটমুক্ত পর্যটন নগরী করতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। তারই অংশ হিসেবে ইজিবাইক চালকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। যারা এ প্রশিক্ষণে অংশ নেবে না তাদের পুলিশে চালক হিসেবে ডাটাবেজ করবে না। আর যারা ডাটাবেজে থাকবেন না তাদের ইজিবাইক চালানোর অনুমতি থাকবে না। ইজিবাইক চালকদের প্রশিক্ষণের পর ডাটাবেজ ও আইডি কার্ড তুলে দেয়া হবে।
অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ইজিবাইক চালকদের তথ্য যাচাই-বাচাই করে ডাটা করা হচ্ছে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, 'বিভিন্ন সময় অপরাধে জড়িয়েছেন। আবার নতুন করে অপরাধে জড়াতে পারেন যাচাই-বাচাইয়ে এমন কারও প্রমাণ থাকলে তাকে ডাটাবেজের আওতায় নেয়া হবে। পর্যটকসহ স্থানীয়দের নিরাপত্তা বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।
ইজিবাইক চালকের আড়ালে কেউ নিরাপত্তায় বিগ্ন ঘটালে তার বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, 'এই প্রশিক্ষণ বা ডাটাবেজের কারণে কোন ইজিবাইক চালক অপরাধ করলে তাকে শনাক্তে কোন ধরণের বিগ্ন ঘটবে না। আর কেউ অপরাধীর আড়ালে ইজিবাইক চালকও হতে পারবেন না।
কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবর রহমান বলেন, 'পৌরসভা ৩ হাজার টমটমের লাইসেন্স দিলেও এখন শহরে টমটম চলাচল করে ৫ হাজারের বেশী। এতে করে শহরে প্রতিদিন যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়া ইজিবাইক চালকরা আর কোন ঘটনার জন্ম দিতে পারবেন না।
ইউএনডিপির প্রতিনিধি মাসুদ করিম বলেন, পর্যটন শহর কক্সবাজারের চালকদের প্রশিক্ষণ দিতে ইউএনডিপি সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাবে। কক্সবাজারে যানজট নিরসনে ইজিবাইক চালকদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ পর্যটন নগরীতে আসা পর্যটক বা স্থানীয়দের নিরাপদ ও যানজটমুক্ত রাখবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জাসিম উদ্দিন বলেন, পর্যটন নগরী কক্সবাজারে যানজট নিরসনে ইজিবাইক চালকদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি। পর্যটন নগরী হিসেবে একটি সুন্দর শহর করার জন্য ইজিবাইক (টমটম) চালকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে চার শতাধিক চালক এ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। অন্তত চার হাজার চালককে এ প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে চাই পুলিশ।
0 মন্তব্যসমূহ