মোঃ মোরসালিন, পূর্বধলা প্রতিনিধিঃ নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় পৃথক দুটি ঘটনায় দুই ব্যক্তি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাত থেকে শনিবার (২৬ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত উপজেলার বিশমপুর গ্রাম ও বারহা উত্তর পাড়া গ্রামে এসব ঘটনা ঘটে। আত্মহত্যার পেছনে মানসিক অশান্তি ও পারিবারিক কলহ মূল কারণ বলে জানা গেছে।
স্ত্রীর পরকীয়ার অভিমানে মোবারকের আত্মহত্যা
শুক্রবার দিবাগত রাত ১১টা ৪৫ মিনিট থেকে শনিবার ভোর ৫টা ৩০ মিনিটের মধ্যে উপজেলার ৮ নম্বর বিশকাকুনি ইউনিয়নের বিষমপুর গ্রামের বাদশা মিয়ার বাড়ির বারান্দায় মোবারক হোসেন (৪২) আত্মহত্যা করেন। তিনি পূর্বধলার ৭ নম্বর আগিয়া ইউনিয়নের মহিষবেড় গ্রামের বাসিন্দা এবং আব্দুস সালাম ও লাইলী বেগমের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোবারক হোসেনের স্ত্রী খায়রুন নাহারের সাথে একই গ্রামের বাদশা মিয়ার পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে স্ত্রী খায়রুন নাহার বাদশা মিয়ার হাত ধরে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় চলে যান। কিছুদিন আগে মোবারক ঢাকায় গিয়ে স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন, তবে ব্যর্থ হন। স্ত্রীর প্রতি অভিমান ও মানসিক যন্ত্রণায় মোবারক বাদশা মিয়ার বাড়ির বারান্দায় সাদা নাইলনের রশি দিয়ে গলায় ফাঁস দেন।
শনিবার সকালে বাদশা মিয়ার স্ত্রী সেলিনা বেগম বারান্দায় ঝুলন্ত অবস্থায় মোবারকের মরদেহ দেখতে পান। পরে তার চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে আসে এবং নিহতের চাচা আব্দুর রহমান থানায় খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে এবং মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
মোবারক হোসেনের চার পুত্রসন্তান রয়েছে, যার মধ্যে বড় ছেলে কামরুল হাসান জিহাদ বিবাহিত। অপরদিকে বাদশা মিয়াও বিবাহিত এবং তারও তিন পুত্রসন্তান রয়েছে।
এ বিষয়ে পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল আলম বলেন, ‘‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’’
মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় নাঈমের আত্মহত্যা
একই দিনে উপজেলার জারিয়া ইউনিয়নের বারহা উত্তর পাড়া গ্রামে নাঈম মিয়া (২৩) নামের এক যুবক গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তিনি ওই গ্রামের আব্দুল মোতালিব ও হাজরা খাতুনের ছেলে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নাঈম দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত ছিলেন এবং কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ছিলেন। শনিবার সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে নাঈম তার মায়ের কাছে ভাত খাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তার মা জানান যে ভাত এখনো রান্না হয়নি, কিছুক্ষণ পরে খেতে পারবেন। পরে পরিবারের সদস্যরা দেখতে পান যে, বসতঘরের পাশে একটি পরিত্যক্ত ঘরের ভেতরে নাঈম গলায় রশি দিয়ে ঝুলছেন।
স্থানীয়দের সহায়তায় মরদেহ নামিয়ে আনা হয়। মাদকাসক্তি ও মানসিক ভারসাম্যহীনতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে এবং পুলিশের অনুমতিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পূর্বধলা থানার ওসি নুরুল আলম বলেন, ‘‘দুটি ঘটনাতেই পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। একটি মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে এবং অন্যটি পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে হস্তান্তর করা হয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ